বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বর্ষা ঋতুর আগমনের আগেই গত দুইদিন ধরেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।ষড়ঋতুর অন্যতম বৈচিত্রময় ঋতু বর্ষা ।আমাদের দেশের কৃষিময় অর্থনীতিতে বর্ষা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।বর্ষার বর্ষনে সিক্ত হয় ্গ্রীষ্মের তাপদাহে শুকিয়ে যাওয়া ফসলের মাঠ,জীবনের জয়গানে আবার জেগে ওঠে চৌচির মাঠ,ঘাঠ প্রান্তর।বর্ষার অমিয় ধারার পথ চেয়ে থাকে বাংলার কৃষক।বর্ষার জন্য অপেক্ষায় থাকে কবি,মহাকবি।বর্ষার কালো মেঘে ছেয়ে থাকা আকাশ,থেমে থেমে একটানা চলা অবিরাম বৃষ্টির মিছিল সবাইকে জীবনমূখী করে তোলে।স্কুলে না যাওয়ার অজুহাত খোঁজার জন্য আকাশের দিকে চেয়ে থাকতাম।যদি বিশাল আকাশের কোন এক কোণায় একমুঠো কালো মেঘ দেখতাম তাহলে বৃষ্টি আসবে এই ভয়ে আর স্কুলে যাই কে?মতি ফকিরের কলা বাগানই উত্তম ঠিকানা।বন্ধু বান্ধব মিলে বিচি কলা সহ গাছ ছুরি করে বাড়ির পেছনে নিয়ে আসতাম কাক পক্ষী ও যেন টের না পায়।কলা দিয়ে তৈরী করতাম মজাদার ভর্তা আর নিথর কলাগাছ দিয়ে তৈরী করতাম ভেলা।বৃষ্টিময় সারাদিন কাটাতাম ভেলা নিয়ে বিলে ঝিলে।টিনের ও ছনের ঘরের ছাদে পড়া বৃষ্টির ঝুপ ঝুপ শব্দে রাতে ঘুমাতাম এই আশা নিয়ে যেন আগামীকালও প্রচন্ড বৃষ্টি হয় ।বৃষ্টির স্মৃতিগুলো খুবই মনে পড়ে।তাই আজও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেই আমার বাসার ব্যালকনিতে গিয়ে বৃষ্টিভেজা বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকি।ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে আমরা কতই না সৌভাগ্যবান!আমরা বৃষ্টি উপভোগ করি,আমরা কালবৈশাখীর রুদ্রমূর্তি উপভোগ করি, আমরা শরতের সাদামেঘে ভরা আকাশ ও নদীর পাশের কাশবন উপভোগ করি, আমরা হেমন্তের নবান্ন ও শীতের আগমনীকে স্বাগত জানাই,কনকনে শীতের সকালে খেজুরের রসে পিঠা পায়েসে আমরা মজে যায় আর বসন্তের মৃদু মন্দ হাওয়া ও কোকিলের মুধুর সুরে আমরা আবার জীবনে চাঙ্গা হয়ে উঠি।এই তো আমাদের রারো মাস!গত কয়েক দিনের মৃষল ধারে বৃষ্টিতে মনটা স্মতিময় হয়ে উঠলেও এই বৃষ্টি শহরের মানুষের জন্য চরম দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁডিয়েছে।গত প্রায় ১০/১২ বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরের উপকূলীয় অঞ্চল হালিশহর ও তার আশেপাশের এলাকা এবং আগ্রাবাদ এলাকার আশেপাশের এলাকা বেপারী পাড়া,আবিদর(বিল্লা পাড়া),হাজি পাড়া,ছোট পোল,আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ,আগ্রাবাদ চৌমূহনী এলাকার প্রতিটি সড়ক প্রতিদিন জোয়ার ভাটায় পানিতে পূর্ণ থাকে।এসব এলাকার বাসা গুলোতে নিচের তলায় বাস করার অনূপযোগী।তবুও স্বল্পআয়ের মানুষ কোনো রকমে তাদের দিনাতিপাত করেছে মাত্র।আমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে তো প্রতিটি সড়কে কোমর সমান পানি থাকে।শহরের বাসিন্দাদের এমন অমানবিক কষ্টের দূর্দিনে চরম ও পরম তুষ্টিতে আছে জনপ্রতিনিধারা। কারণ এই রকম দূর্ভোগ হলে বিভিন্ন মিডিয়ায় তা ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হয়। আর তাতেই হয় বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা।আর নেওয়া হয় জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ।সমস্যাটি যেখানে একেবারে সুরহা হয়ে যায় সেই ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়না!। কারণ তাতে কর্তাব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত যে সরকারি অনুদান হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।প্রতি বছর উচু করা হয় কোনো না কোনো সড়ক।প্রতি বছর হাতে নেওয়া নতুন নতুন প্রকল্প।প্রতি বছর আসতেছে ইনকাম!কিন্তু আসল কাজ আর করা হয় না?জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তমূখী কেনো পদক্ষেপ গ্রহন না করার কারনে পুরো শহরটাই পানিতে ভরে যাচ্ছে। হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। হায়রে দেশ!হায়রে মুক্তিযুদ্ধ!হায়রে স্বাধীনতা!হায়রে জন প্রতিনিধি!হায়রে উন্নয়নের চেতনা!হে আল্লাহ আমাদেরকে ধৈর্য্য ধারন করার তওফিক দান করুন---আমীন।



0 Comments